ফুরফুরে মেজাজে পার্থ চট্টোপাধ্যায়! দলীয় কর্মীদের বার্তা

রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা প্রাক্তন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী এখন জেলবন্দি। তবে, এদিন তাঁর গলায় ছিল প্রত্যয়ী সুর, সঙ্গে পোশাকেও ছিল চাকচিক্য। গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বেড়েছে। তবে, জেল থেকেও তিনি যেন ভুলতে পারছেন না দলীয় কর্মী এবং সতীর্থদের।

এদিন আদালত চত্বরে প্রাক্তন মন্ত্রীকে বেশ শান্ত দেখায় সাংবাদিকদের ভিড়ের মাঝে। আজ তিনি কিছুটা উৎসুক হয়েই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। বছর শেষের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে বৃহস্পতিবার আলিপুর আদালতে ঢোকার মুখে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দলের প্রতিষ্ঠা দিবস এবং নতুন বছরের আগাম শুভেচ্ছা জানালেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

উল্লেখ্য, রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায় গত কয়েক মাস ধরেই জেলবন্দি। জেল হেফাজত শেষে এদিন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী-সহ ৭ জনকে আলিপুর আদালতে তোলা হয়। এদিন সবুজ রঙের পাঞ্জাবী এবং নীল রঙের জহর কোর্ট পরে আদালত চত্বরে পৌঁছান পার্থ। এদিন তাঁর চোখেমুখে আত্মবিশ্বাসের ছাপ ছিল স্পষ্ট। এদিন আদালতে ঢোকার মুখে সাংবাদিকদের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথাও বলেন তিনি।

এদিন তিনি বলেন, ‘তৃণমূলের ২৫ তম প্রতিষ্ঠা উপলক্ষ্যে সকল সহকর্মীদের শুভেচ্ছা জানাই। বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী সকলকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই। আমার এলাকা বেহালার নাগরিকদের অভিনন্দন। বহু প্রতীক্ষিত জোকা-তারাতলা মেট্রো রেল চালু হোক। আমাদের বহুদিনের শখ, তা যেন পূর্ণতা পায়।’ এদিকে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের শুভেচ্ছা বার্তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়ে গিয়েছে তোলপাড়। বিরোধীদের দাবি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে যে দুরত্বের কথা বারবার বলা হয়, তার আদতে ভিত্তিহীন, সবটাই সাজানো।

যদিও বিরোধীদের এই দাবি খারিজ করে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন যে, ‘তৃণমূল কংগ্রেস সম্পর্কে যা বলেছেন তা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। মন্ত্রিসভা এবং দল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পার্থবাবুর কিছু কাজ দল ভাল চোখে নেয়নি তাই এই সিদ্ধান্ত। পার্থবাবু বয়স্ক মানুষ। দীর্ঘদিন একটি দলে ছিলেন। দল পার্থ চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে তার অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে। তবে কী বলছেন তার দায় দল নেবে না।’ এদিকে, জানা গিয়েছে যে, এদিন সিবিআই তাঁর বিরুদ্ধে সেসব তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করেছে সেগুলি আদালতে পেশ করবে। সূত্রের খবর, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী আজও তাঁর শারীরিক অসুস্থতার কথা সামনে এনে জামিন চাইতে পারেন।

উল্লেখ্য, এর আগেও শর্ত সাপেক্ষে জামিন চেয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু জামিন মেলেনি বারবার চেষ্টা করেও। বারবারই তাঁর বিরুদ্ধে প্রভাবশালী তত্ত্বকে হাতিয়ার করেছে তদন্তকারীরা। ইডি-র মামলায় ইতিমধ্যেই ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত জেল হেফাজত হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। গত ১৫ ডিসেম্বর জেল থেকে ভার্চুয়ালি হাজিরা ছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। সেই মামলাতেই ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় বিশেষ আদালত।

প্রসঙ্গত, গত জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে ইডি’র জালে ধরা পড়েন পার্থ ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ও। তাঁর দু’টি ফ্ল্যাট থেকে নগদ প্রায় ৫০ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করেন তদন্তকারীরা। এছাড়া প্রচুর সোনার গয়নাও বাজেয়াপ্ত করা হয়। অর্পিতা দাবি করেছিলেন, তাঁর ফ্ল্যাট দু’টি ‘মিনি ব্যাংক’ হিসাবে কাজে লাগাতেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এদিকে, গ্রেফতার হওয়ার পর পার্থর পাশ থেকে কার্যত সরে গিয়েছে তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। মন্ত্রিত্বের পাশাপাশি তৃণমূলের সমস্ত পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় তাঁকে। তবে, জেলে থাকলেও দলের সমর্থনেই সবসময় কথা বলেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। 

Latest articles

Related articles