সেলাই দিদিমনি পেলেন “পদ্মশ্রী”

দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের নয় নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ৬৭ বছরের প্রীতিকণা গোস্বামী ৷ শুধু বাংলা বা ভারতের সীমানায় আবদ্ধ থাকেননি, বিদেশেও তার শিল্পকীর্তি ছড়িয়ে পড়েছে৷ একদিন অভাবের তাড়নায় যে সুই-সুতো হাতে তুলে নিয়েছিলেন, সেগুলোই আজ তাকে এনে দিলো ভারতবর্ষের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান।

নাম ছড়িয়ে পড়ার আগে যে নিরন্তর লড়াইয়ের মধ্যে তার অস্তিত্বের সংগ্রাম শুরু হয়েছিল, তা একজন শিল্পীর সাধনাও বটে৷ ১৯৭৩ সালে পাঁচ বোনের সংসার চালাতে অনেকটা বাধ্য হয়েই সেলাইয়ের কাজ ধরেছিলেন তিনি।গত বুধবার রাত ১০টায় ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ফোনে সুখবর পান প্রীতিকণা গোস্বামী। এখনো তার সেই ঘোর কাটেনি। প্রীতিকণার কাছে সেলাই শুধু শিল্পসৃষ্টির জন্য নয়, নারীর ক্ষমতায়নের জন্যও বটে। তার মতো দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে এগিয়ে যেতে আরও বহু দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশের বরিশালে পূর্বপুরুষের ভিটে প্রীতিকণার৷ তার ঠাকুমা ছিলেন সেলাইয়ে সোনার পদক জয়ী৷ ঠাকুমার সেসব কাজ তাকে উৎসাহ দিয়েছে৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে জন্মানো প্রীতিকণার কাঁথা-এমব্রয়ডারি শিল্পে তেমন জ্ঞান ছিল না৷ এক বন্ধুর অনুপ্রেরণায় হাতেখড়ি হয় তার৷ সংসারের দুর্দিনে এই শিল্পকে আঁকড়ে ধরেন উপার্জনের পথ হিসেবে৷ এভাবে কেটে যায় অনেকগুলি বছর৷ পরে ক্রাফ্টস কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল-এর একটি কাঁথাস্টিচের কাজ ১৭টি বিনিদ্র রাত জেগে শেষ করেন৷ এমন একাগ্রতা দেখানোয় এরপর ক্রাফ্টস কাউন্সিল তাকে একটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিতে বলে৷ প্রীতিকণা বিভিন্ন জাদুঘর ঘুরে বছরের পর বছর ধরে নিরন্তর কাজ শিখেছেন এবং সে সব শিখিয়েছেন৷ বহু নারীর জীবন ও জীবিকা সুষ্ঠুভাবে চালানোর দায়িত্ব পালন করে এভাবেই তিনি হয়ে উঠেন স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান৷

বড় মেয়ে মহুয়া বলেন ‘‘আমাদের দেশে শিল্পী, কারিগরদের শ্রদ্ধা, সম্মান, পারিশ্রমিক অনেক কম৷ ছোটবেলা থেকে আমরা দারিদ্র্য দেখে বড় হয়েছি৷ তার উপর তেমন সম্মানও জোটেনি৷ এমনকি ২০০১ সালে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নেওয়ার পরও আমার মাকে প্রতিবেশীরা আলাদা চোখে দেখেনি৷ বরং আমার কিংবা বোনের মা হয়েই তিনি আটকে থেকেছেন একটা নির্দিষ্ট পরিচয়ের গণ্ডিতে ৷’’

প্রীতিকণা গোস্বামী হয়ে উঠেছেন বাংলা তথা ভারতের নারী ক্ষমতায়নের প্রতীক৷ রাষ্ট্রপতি কালামের হাত থেকে জাতীয় পুরস্কার নেওয়ার পর পদ্মশ্রী সম্মান তার দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে৷ এখন বাংলার মেয়েদের স্বাবলম্বী করার জন্য আরও উদ্যম পেয়েছেন৷ সহাস্য মুখে সোনারপুরের পদ্ম পুরস্কার জয়ী ‘সেলাই দিদিমণি’ বলেন, ‘‘প্রথমে অর্থ উপার্জনের জন্য কাজ করেছি৷ পরে পুরস্কার পেয়ে বুঝেছি তার গুরুত্ব৷ তবে বয়সের ভার রয়েছে, পুরস্কার প্রাপ্তিতে আরও অনেক দায়িত্ব জুড়ে গেল৷’’

Latest articles

Related articles