প্রকাশ্যে নগ্ন করে চলে অত্যাচার! মৃত্যুর কয়েক মুহূর্ত আগে ঠিক কী কী ঘটেছিল স্বপ্নদ্বীপের সঙ্গে?

সিনিয়র দাদাদের ‘ইন্ট্রো’র নামে র‍্যাগিং! যার ফলশ্রুতি যাদবপুর ইউনিভার্সিটি –র প্রথম বর্ষের পড়ুয়া স্বপ্নদীপ কুন্ডু –র মর্মান্তিক মৃত্যু। উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে ৭৮ শতাংশ নম্বর পেয়েও বাংলা নিয়ে উচ্চশিক্ষা লাভের আশায় সে পাড়ি দিয়েছিল যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে। কিন্তু যাদবপুরে এসে হোস্টেলে তিনটে দিনও কাটাতে পারলো না স্বপ্নদীপ। বুধবার রাতে মেন হোস্টেলের ৩ তলা থেকে ঝাঁপ দেয় সে। তবে মৃত্যুর কয়েক মুহূর্ত আগে ঠিক কী কী ঘটেছিল তার সঙ্গে? জানলে শিউরে উঠবেন।

১৮ বছরের তরতাজা তরুণ স্বপ্নদীপ কেন জীবনের স্বপ্ন পূরণের পথে পা দিয়েই এমন চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল? এর পেছনে রয়েছে যাদবপুর ইউনিভার্সিটির হোস্টেলের ভয়াবহ সত্য। ধীরে ধীরে যা প্রকাশ হচ্ছে। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, সৌরভ চৌধুরী নামের একজন প্রাক্তনী এবং তার দলবল ওই দিন রাতে স্বপ্নদীপের উপর নির্যাতন চালায় |

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্র ভয়াবহ ওই রাতের বিষয়ে জানিয়েছেন যে সিনিয়র দাদারা ইন্ট্রো নেওয়ার নাম করে স্বপ্নদীপ এবং তার মত নতুন ছাত্রদের ডেকে পাঠিয়েছিল তাদের ঘরে। তাদেরকে সেখানে নানান প্রশ্ন করা হতে থাকে। এমনকি অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিও তারা করেছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে কেউ কেউ জানিয়েছেন মৃত্যুর ঠিক কয়েক মুহূর্ত আগে তারা স্বপ্নদীপকে উলঙ্গ অবস্থায় উদভ্রান্তের মত আচরণ করতে দেখেছেন।

স্বপ্নদীপের বাবা রামপ্রসাদ কুন্ডু সরাসরি অভিযোগের আঙুল তুলেছেন সৌরভের দিকে। তিনি সৌরভকেই ওই হোস্টেলের মাথা বলে দাবি করেছেন। সে নাকি স্বপ্নদীপকে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতে দিত না। মৃত্যুর রাতে ফোনে মাকে স্বপ্নদীপ শুধু এটুকুই বলতে পেরেছিল, ‘মা আমি ভাল নেই।’ তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্বপ্নদীপের বাবা-মাকে জানানো হয় তাদের ছেলে তিন তলা থেকে পড়ে গিয়েছে।

এদিকে আবাসিকদের মধ্যে প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ বলছেন স্বপ্নদীপ নাকি উলঙ্গ অবস্থায় ওই রাতে প্রত্যেক ঘরের দরজায় গিয়ে টোকা মেরে মেরে বলছিল ’আমি গে নই’! যাদবপুর ইউনিভার্সিটির জনৈক ছাত্র আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন ঘটনা ঘটার আগের মুহূর্তে তিনি এ-টু ব্লকে ভীষণ জোরে জোরে আওয়াজ হতে শুনেছিলেন। ওই সময় তিনি ওই ব্লকের নিচেই দাঁড়িয়েছিলেন। কী হয়েছে জানতে চাইলে তাকে বলা হয় হোস্টেলে গভর্নিং বডির মিটিং চলছে।

ঠিক এরপরই ওই ছাত্র যখন পেছনে ফিরে তাকান তখন দেখেন স্বপ্নদীপ ভীষণ রাগান্বিত অবস্থায় চেঁচামেচি করতে করতে তিনতলার কার্নিশে এসে দাঁড়ায়। তারপর ঠিক যেভাবে লোকে পুকুরে ঝাঁপ দেয় সেইভাবে বারান্দা থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়েন। স্বপ্নদীপের মৃত্যুর প্রত্যক্ষদর্শী ওই ছাত্র জানিয়েছেন রাগিং নামের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তারও হয়েছিল। তিনি এর প্রতিবাদ করেও কোনও সুরাহা করতে পারেননি। তাকেই আজ চোখের সামনে জলজ্যান্ত একটি ছেলের মৃত্যুর সাক্ষী হতে হল।

Latest articles

Related articles

spot_img