সোমবার এসএসসি মামলায় হাই কোর্টের রায়ের পর স্কুলে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, পড়ুয়া ও অভিভাবক দের মনে নানান প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে ।কারা থাকবেন? কারা পড়াবেন? পঠনপাঠন ছাড়া স্কুলের অন্যান্য কাজকর্মই বা চলবে কী করে? ২০১৬-র বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী চাকরি পাওয়া শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা যে সব স্কুল নিযুক্ত রয়েছেন, সেখানে প্রশ্নগুলি আরও প্রকট। এদিন থেকে সরকার অধীনস্থ স্কুলগুলিতে গরমের ছুটি শুরু হয়েছে। গরমের ছুটি শেষে স্কুল খুললে কী অবস্থা তৈরি হবে, তা এখন থেকেই ভাবাচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। বিশেষ করে সারা বছরই পরীক্ষা, মূল্যায়ন, ফলাফল বাংলার শিক্ষা পোর্টালে তোলা। দিনের পর দিন কাজের চাপ বাড়ছে। যা আরও বাড়বে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে সেমেস্টার ব্যবস্থা চালুর হাত ধরে। এই অবস্থায় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী বাড়ন্ত হলে সব কাজ ঠিকঠাক সময়মতো করে ওঠা যাবে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় বিভিন্ন স্কুলের কর্তৃপক্ষ। তাঁদের মতে, এই ঘাটতি দ্রুত পূরণের আশা কম। কারণ পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াটাই মামলা মোকদ্দমার জালে জড়িয়ে।
এ বিষয়ে চিন্তিত মধ্যশিক্ষা পর্ষদও। তাই দ্রুত সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন পর্ষদ সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “স্কুলের পরিচালনা, পঠনপাঠন ইত্যাদি সব ব্যবস্থা দেখা, বোঝা, জানা পর্ষদের দায়িত্ব। ফলে, স্কুলগুলো কীভাবে চলছে এবং চলবে সেটার উপর আমায় নজর রাখতে হবে। তাই যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন রাখব। এবং নির্দোষ প্রার্থী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত যেন না হন, সেদিকে নজর রাখব।”
শিক্ষাকর্মীদের থেকেও শিক্ষক সংকট বেশি করে ভাবাচ্ছে স্কুলগুলিকে। যে সব স্কুলের একাদশ-দ্বাদশের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক এই রায়ের আওতায় আসছেন। মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জ রাজা বিজয়সিং বিদ্যামন্দিরের ভারপ্রাপ্ত সহ-প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, “সাংঘাতিক প্রভাব পড়বে স্কুলের উপর। আমাদের সাতজন শিক্ষক এই নির্দেশের অধীনে আসছেন। তাঁদের মধ্যে একাদশ-দ্বাদশেরই তিনজন বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক। সংস্কৃতের শিক্ষক দিয়ে তো ফিজিক্স পড়ানো যাবে না। চালাব কী করে? আমরা দিশাহারা, অসহায় হয়ে যাচ্ছি।”
ই স্কুলে প্রায় ১৮০০ পড়ুয়ার জন্য ৩৫ জন শিক্ষক ছিল। হাই কোর্টের নির্দেশ কার্যকর হলে সেই সংখ্যা ২৯-এ নেমে আসবে। খাস দক্ষিণ কলকাতারই যাদবপুর বিদ্যাপীঠ স্কুলের একমাত্র কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষকই এই রায়ের আওতায় পড়ছেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বলেন, “একজন শিক্ষক চলে গেলে নিশ্চয়ই অসুবিধা হবে। তবে, উচ্চতর কর্তৃপক্ষ আমাদের যেমন নির্দেশ দেবেন, আমরা সেটা মেনেই চলব।” সোনারপুর এলাকার হরিণাভি ডিভিএএস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিক্রমজিৎ মণ্ডল জানিয়েছেন, স্কুলের একজন গণিত, একজন কেমিস্ট্রি ও একজন বায়োলজির শিক্ষক এই রায়ের অধীনে আসছেন। বিক্রমবাবুর কথায়, “এনারা চলে গেলে আমায় বিকল্প হিসাবে পার্ট-টাইম শিক্ষক নিযুক্ত করার কথা ভাবতে হবে। ছেলেমেয়েদের তো বঞ্চিত করা যাবে না। তবে, যদি চাকরি যায় তবেই।”