রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের মধ্যে থেকেই দলের লোকসভা নির্বাচন পরিচালন কমিটি তৈরি হচ্ছে। ঘোষণা না হলেও সেই কমিটি ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গিয়েছে বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। মঙ্গলবার নিউ টাউনের একটি হোটেলে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে বৈঠকে বসছেন রাজ্য নেতৃত্ব। একেবারে রাজ্য বিজেপির শীর্ষ কমিটিতে না থাকলেও নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত কমিটিতে থাকবেন অনেকেই। তাঁদের সকলকেই মঙ্গলবারের বৈঠকে ডাকা হয়েছে।
কমিটির মাথা কে হবেন? বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, দলীয় নেতৃত্ব সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেও তা এখনই বলতে রাজি নন। তবে একটি সূত্র জানাচ্ছে, দলের পাঁচ রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে এক জনকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। রাজ্য বিজেপিতে এখন পাঁচ জন ওই পদে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দু’জন সাংসদ ও দু’জন বিধায়ক। এক মাত্র জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় জনপ্রতিনিধি নন। সে ক্ষেত্রে তাঁর হাতে কমিটি পরিচালনার দায়িত্ব যেতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। প্রসঙ্গত, ধর্মতলায় অমিত শাহের সভা-সহ বেশ কয়েকটি সাম্প্রতিক বড় কর্মসূচিতে জগন্নাথকেই ‘নেতৃত্বে’ রাখা হয়েছিল। রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষ নেতা এমন সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেননি। তবে পাশাপাশি বলেছেন, ‘‘আমরা মাথানির্ভর দল নই। কর্মীনির্ভর দল। আমাদের নীতি আগে লেজ ঠিক করা, পরে মাথা। তাই কোনও জল্পনা না রাখাই শ্রেয়।’’
বস্তুত, রাজ্য বিজেপি এই কমিটি নিয়ে এতটাই গোপনীয়তা রাখতে চাইছে যে, যাঁরা সদস্য হবেন, তাঁদের অনেককে বৈঠকের আগে কার্যত শেষমুহূর্তে মঙ্গলবার সকালে ফোন করে বৈঠকে ডাকা হয়েছে। আগে থেকে কিছু বলা হয়নি। যদিও গত কয়েক দিন আগেই কমিটির রূপরেখা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের সিলমোহরের পরেই তা চূড়ান্ত হয়েছে। রাজ্য বিজেপির সর্বশেষ কার্যকারিণী বৈঠকেই বলা হয়েছিল, ৯ জানুয়ারি রাজ্য স্তরের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ঘোষণা করা হবে। সেই হিসাবে মঙ্গলবার কমিটি ঘোষণা করেও দিতে পারেন সুকান্ত। বিজেপির যা পরিকল্পনা, তাতে এর পরে প্রতিটি লোকসভা এলাকা এবং প্রতিটি বিধানসভা এলাকাতেও একটি করে কমিটি তৈরি হবে। সেই কমিটিই লোকসভা নির্বাচন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
প্রসঙ্গত, ডিসেম্বর মাসে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতে দীর্ঘ বৈঠক হয় রাজ্য নেতাদের। সেই সময়ে বলা হয়েছিল, পদ্মশিবিরের নির্বাচনী কমিটি তৈরি হয়ে গিয়েছে। তাতে ১১ জন সদস্য থাকছেন। তবে আনন্দবাজার অনলাইন তখনই জানিয়েছিল, এমন কোনও কমিটি নড্ডা-শাহের উপস্থিতিতে তৈরি হয়নি। পরে সে কথা প্রকাশ্যে জানিয়ে দেন সুকান্তও।
তবে পদ্মশিবির যে কমিটি ঘোষণা করতে চলেছে, তাতে সেই জল্পনার থেকে ১০ গুণ বেশি সদস্য থাকতে পারেন নির্বাচন পরিচালন কমিটিতে। শতাধিক সদস্য নিয়ে তৈরি কমিটিতে ৩৪ থেকে ৩৫টি বিভাগও থাকতে পারে। সাধারণ প্রচার থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা শাহ-নড্ডার প্রচার পরিকল্পনার জন্য যেমন আলাদা বিভাগ তৈরি হতে পারে, তেমনই নির্বাচনের খরচ, কল সেন্টার পরিচালনা, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সম্পর্ক, প্রচার সরঞ্জাম তৈরি করার মতো বিভিন্ন কাজ আলাদা আলাদা বিভাগে আনা হবে। রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, এত বড় এবং এমন ভোট পরিচালনা কমিটি অতীতে তৈরি হয়নি এ রাজ্যে। কমিটিতে বিজেপির সব মোর্চা এবং শাখার নেতারাও থাকছেন। একই সঙ্গে মঙ্গলবারই দফায় দফায় আলোচনায় বসবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তাঁরা আলাদা আলাদা করে বিভাগ অনুযায়ী আলোচনা করবেন।